Header Ads

শীর্ষ সিরিয়াল কিলার খুনিরা (পর্ব-১)

বিশ্বের মহান যা কিছু সৃষ্টি তার সবই অবদান রয়েছে মানুষের। পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকে মানুষ এখানে বসবাস করে আসছে। মানুষ জন্মের সূচনা থেকেই শান্তি ও শৃঙ্খল ভাবেই পৃথিবীতে বসবাস করে আসছে বলে এই পৃথিবী দীর্ঘদিন ধরে টিকে রয়েছে। তবে এই সকল শান্তি প্রিয় মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানুষ বা ব্যক্তি রয়েছে যারা অশান্তি করতে ভালবাসে।

এই সকল অশান্তি প্রিয় মানুষদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যাদের নরহত্যা করতে ভাল লাগে। ভাল লাগা বা রাগ বা প্রতিহিংসা যে কারণেই হোক না কেন তারা নিজ হাতে পৃথিবীর বুকে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। আর এই নরহত্যা কারীদের এক কথায় সিরিয়াল কিলার বলা হয়।

সিরিয়াল কিলার কারা: 


সিরিয়াল কিলার কাদের বলা হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে বলতে হয় যারা ঐতিহ্যগতভাবে নিজ ইচ্ছায় একটি সময়, এক মাস বা এক ঋতুর শেষের সময় নিয়ে তিন জন বা তিন এর অধিক মানুষকে নিজ হাতে হত্যা করেছে তাদের সিরিয়াল কিলার বলা হয়। যাদের  একাধিক মানুষ হত্যার পিছনে প্রধান কারণ থাকে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তারাই সিরিয়াল কিলার। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর গবেষণায় দেখা গেছে সিরিয়াল কিলাররা সাধারণত রাগ, উত্তেজনা, অর্থের প্রভাব ইত্যাদি কারণে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সিরিয়াল কিলাররা একই নিয়মে তাদের হত্যার কাজ করে থাকে। বিশ্বের দেশে দেশে সিরিয়াল কিলারদের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় সিরিয়াল কিলারের সংখ্যা বেশী। আমেরিকার সিরিয়াল কিলারগন বেশীরভাগ সাদা বর্ণের পুরুষ, যাদের বয়স ২০-৩০ এর মধ্যে। সিরিয়াল কিলার পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও হতে দেখা যায়। তবে মেয়েদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। সিরিয়াল কিলারগন চারিত্রিক দিক থেকে ছিল খুবই বদ মেজাজি, কামুক, হৃদয়হীন ও খুব সাহসের অধিকারী। সিরিয়াল কিলারদের সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের শীর্ষ ১০জন সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে জানবো। আজ প্রথম পর্বে আমরা বিশ্বের প্রধান তিন জন সিরিয়াল কিলারের সাথে পরিচিত হবো।


জিল দ্য রাই: 



জিলকেই পৃথিবীতে আধুনিক সিরিয়াল কিলারদের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ১৪০৪ সালে ফ্রান্সে এই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের জন্ম হয়। তার পুরো নাম জিল দ্য রাই। জিল নিজ হাতে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল যাদের বেশিরভাগই ছিল বালক শিশু এবং এরা সবাই ছিল ব্লন্ড চুল ও নীল চোখের অধিকারী। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে জিল নিজেও ছেলে বেলায় এদের মতোই ব্লন্ড চুল ও নীল চোখের অধিকারী ছিলেন। ধারণা করা হয় জিল তার যৌন ইচ্ছা পূরণ করতে এসব নিরীহ শিশুদের উপর পাশবিক অত্যাচার  করতো এবং এরপর তাদের হত্যা করতো। হত্যার করার পর সে বেশিরভাগ শিশুকেই আগুনে পুড়িয়ে ফেলত। জিলের শিকারের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি কিন্তু ধারণা করা হয় তার শিকার সংখ্যা প্রায় ৮০ থেকে ২০০টির মতো ছিল। আবার কারও কারও মতে এর সংখ্যা ৬০০টিরও বেশী। তিনি যাদের হত্যা করেছিলেন তাদের বয়স ছিল ৬-১৬ বছরের মধ্যে। 

জিলের এক চাকর হ্যানরিয়েট তার মনিবের জন্য শিশুদের সংগ্রহ করে নিয়ে আসতো। জিলের পাশবিক কাজ শেষে তারা শিশুগুলোকে একটি রুমে নিয়ে হত্যা করতো এবং জিল এই শিশুদের রক্তে গোসল করতো। হ্যানরিয়েট যখন বাচ্চাদের উপর অত্যাচার করতো তখন জিল বাচ্চাদের চিৎকার ও আর্তনাদ শুনে আনন্দ পেত। জিলের সবচেয়ে আনন্দ হতো যখন অত্যাচারের কারণে বাচ্চাদের শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে যেত। বাচ্চাদের শরীরে আঘাত করার ফলে তাদের শিরা ফেটে রক্ত যখন জিলের গায়ে লাগত তখন জিলের মন আনন্দে ভরে উঠতো। একের পর এক আঘাতে যখন বাচ্চারা মারা যেত তখন হ্যানরিয়েট ঘর পরিষ্কার করে ফেলতো এবং মৃত বাচ্চাদের শরীর তাদের পোশাক সহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলতো। সিরিয়াল কিলারে নাম লেখানোর আগে জিল ছিল সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। জিল দ্য রাইকে তার অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে ১৪৪০ সালের ২৬ অক্টোবর বুধবার তার ৩৬ বছর বয়েসে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।


রিচার্ড ট্রেটন সেচ:



কুখ্যাত এই সিরিয়াল কিলার ১৯৫০ সালের ২৩ মে আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে রিচার্ড তার প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর শিকারের রক্তপান ও মাংস ভক্ষণ করতেন। আর তাই তিনি 'ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো' নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি তার প্রথম শিকার ৫১ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ার এমরোস গ্রিফিনকে হত্যা করেন। এরপর রিচার্ডের দ্বিতীয় শিকার ছিলেন টেরেসা ওয়ালিন নামক একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। যাকে হত্যা করার পর এই নরপিশাচ তার মৃতদেহের সঙ্গে যৌনকার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং তার রক্ত দিয়ে গোসল করেছিলেন। তখন থেকেই চলতে তাকে রিচার্ডের একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ২৭ জানুয়ারি তিনি ৩৮ বছর বয়স্ক ইভেলিন মিরোথকে গুলি করে হত্যা করেন। যিনি ছিলেন তার নিকটতম প্রতিবেশী। মিরোথকে হত্যার পর তিনি একইভাবে ডন মেরিডিটথকে হত্যা করেন। 

মেরিডিটথকে হত্যার সময় রিচার্ড তার ৬ বছর বয়সী পুত্র জেসন, ২২ বছর বয়সী ভাগ্নে ডেভিড সহ আরও তিন জনকে গাড়ির ভিতর গুলি করে হত্যা করেন। রিচার্ড এই সকল ব্যক্তিদের হত্যার পর তার বাসায় ফিরে গিয়ে ডেভিড এর রক্ত পান করা ছাড়াও অন্যদের শরীরের মাংস ছিঁড়ে খেয়েছিল। পরে রিচার্ড মৃতদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যখন পার্শ্ববর্তী চার্চে ফেলে আসছিল তখন একজন ব্যক্তি তাকে দেখে ফেলেন। রিচার্ড এর এই সকল কর্মকাণ্ড দেখে সেই ব্যক্তি পুলিশকে জানান। পরে তার তথ্য ও রিচার্ডের আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে রিচার্ডকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮০ সালের ৮ মে বিচারে কুখ্যাত এ সিরিয়াল কিলার গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। কিন্তু দণ্ডের জন্য অপেক্ষা কালীন সময় ১৯৮০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তার সেলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ডাক্তারি পরীক্ষা করে জানা যায় রিচার্ড মাত্রাতিরিক্ত অবসাদ নাশক ঔষধ খেয়ে আত্নহত্যা করেছিল।


জেফরি ডামার:



জেফরি ডামারের জন্ম ১৯৬০ সালে। কুখ্যাত এ সিরিয়াল কিলার ১৮ বছর বয়সে তার জীবনের প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটায় ১৯ বছর বয়সী স্টিভেন হিকসকে হত্যার মাধ্যমেসে স্টিভেনকে তার বাড়িতে ডেকে আনার পরে তাকে হত্যা করেছিল। জেফরির শিকার সংখ্যা ১৭টিরও বেশি এবং সত্যিকার অর্থেই হত্যাকাণ্ডগুলো ছিল বিভীষিকাময়। তার হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে হতে ১৯৯১ সালের মধ্যে। তবে প্রধান হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছিল ১৯৮৯-১৯৯১ সালের মধ্যে। ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ বছর বয়সে ডামারকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রথম গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার এক বছর সাজা হয় এবং তাকে মেন্টাল থেরাপি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। 

পরবর্তীতে ৫ বছর সন্তোষজনক আচার-আচরণের শর্তে তাকে প্রবেশনে মুক্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু মুক্তির পরপরই সে পুনরায় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। ১৯৯১ সালের ২৭ মে সকালে দেখা যায় সিনথাসোমফোন নামের ১৪ বছরের এক বালক নগ্ন অবস্থায় দ্বিগবেদিক ঘোরাফেরা করছে। যার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্নও আছে। পুলিশ আসলে ডামার পুলিশকে জানায় তাদের মধ্যে মদ পানের সময় ঝগড়া হয়েছে। বালকটির প্রতিবাদ সত্ত্বেও পুলিশ বালকটিকে ডামারের পাশ থেকে সরিয়ে দেয়। কারণ তারা ডামারের প্রতি কোনও সন্দেহ অনুভব করেনি। কিন্তু সেই রাতের পরে ডামার সিনথাসোমফোনকে হত্যা করেছিল এবং তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। ১৯৯১ সালের গ্রীষ্মের পরে ডামার প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক জনকে হত্যা করেছিল।

১৯৯১ সালের ২২ জুলাই ডামার প্রলোভন দেখিয়ে ট্রেসি এডওয়ার্ডকে তার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। ডামার এডওয়ার্ডকে মারার জন্য তাকে হ্যান্ড-কাফ পরাতে গেলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এডওয়ার্ড কোন একভাবে মুক্ত হয়ে পুলিশকে ডাকতে সক্ষম হয়েছিল যখন তার এক হাতে তখনও হ্যান্ড-কাফ ঝুলছিল। পুলিশ ডামারের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাকে গ্রেফতার করে। ডামারকে গ্রেফতারের পর তার বাড়ি থেকে ভয়াবহ সব জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। তার ঘর থেকে এসিড পানিতে ভেজানো অনেক মৃতদেহ ও তার ফ্রিজ থেকে মানুষের অনেক কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তার ঘরের মোমবাতির বেদি থেকে অনেক মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়।

বিচারে  ডামারকে ৯৩৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারের সময় ডামার কারাবাসের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড কামনা করেছিল। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর জিমে কর্মরত অবস্থায় ক্রিস্টোফার স্কেভার নামক এক কয়েদির মারাত্মক পিটুনিতে ডামার মারাত্নক আহত হয়। হাসপাতালে নেয়ার পথে এম্বুলেন্সে ডামারের মৃত্যু হয়।


এরকম আরও পড়ুন:
শীর্ষ সিরিয়াল কিলার খুনিরা (পর্ব-২)
শীর্ষ সিরিয়াল কিলার খুনিরা (শেষ) 

২টি মন্তব্য:

  1. সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে লেখাটি খুব ভাল লাগল...

    উত্তরমুছুন
  2. আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য জনাব আল আমিন আপনাকে ধন্যবাদ। এবিষয়ে শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব গুলোও পড়তে পারবেন।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.